বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই অনলাইনে আয়কর প্রদানের সুযোগ থাকলেও এই প্রথমবারের মতো অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে কিছু এলাকা ও খাতের জন্য। তাই আমাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম জানা অতিব জরুরি।
ঘরে বসে অনলাইনে অন্যান্য সময়ের মতো এই অর্থবছরেও (২০২৩-২৪) আয়কর রিটার্ন বা ইনকাম ট্যাক্স দাখিল করা যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনআরবি) এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে চলতি ২০২৩-২৪ কর বছরের জন্য স্বতন্ত্র করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের সময়কাল ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
আজকের পোস্টে যাদের জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল প্রয়োজন, আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়, আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম বা পদ্ধতি, আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে কি কি লাগে, আয়কর রিটার্ন ফর্ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
Table of Contents
- আয়কর রিটার্ন যাদের জন্য প্রযোজ্য
- আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়
- আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম
- ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- আয়কর রিটার্ন ফরম
- আয়কর রিটার্ন (e return) কি?
- কিভাবে আয়কর রিটার্ন ফরম ডাউনলোড করবেন?
- কিভাবে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়?
- কিভাবে শূন্য রিটার্ন পূরণ করতে হয়?
- কত টাকা আয় হলে কর দিতে হবে?
- আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে কি হবে?
- Follow Us
আয়কর রিটার্ন যাদের জন্য প্রযোজ্য
যারা আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন তাদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যাদের করযোগ্য আয় আছে এবং যাদের রিটার্ন দাখিল করতে হবে তারা আয়কর জমা দেবেন। যেমন:
- কোনো ব্যক্তির আয় বছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে। তবে নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী একজন করদাতার আয় বছরে ৪ লাখ টাকার বেশি হলে।
- একজন তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতা যার আয় বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হলে।
- একজন গেজেটেড যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতা যার আয় বছরে ৫ লাখ টাকার বেশি হলে।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়
প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর এর মধ্যে করদাতারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে (etaxnbr.gov.bd) আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। করদিবসের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা হলে কোন জরিমানা বা অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হয় না।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের নিয়ম
ই-রিটার্ন নিবন্ধন: প্রথমে ই-রিটার্ন ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। একবার নিবন্ধিত হয়ে গেলে, আপনি তারপর ওয়েবসাইটে যান এবং আপনার টিআইএন (TIN), পাসওয়ার্ড এবং ক্যাপচা দিয়ে সাইন ইন করতে পারবেন।
ট্যাক্স মূল্যায়ন তথ্য: ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট ইনফরমেশন’ ই-রিটার্ন ফর্মের শুরুতে থাকবে। সেখানে আয়কর সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য- রিটার্ন স্কিম, আয়ের বছর ও উৎস- দিতে হবে। আপনার আয় যদি করমুক্ত হয়, তাহলে আয়ের পরিমাণ সহ আপনাকে ‘রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস’ দিতে হবে।
আয়ের বিবরণ: আপনার আয়ের উৎস লিখুন এবং পরবর্তী ধাপে যেতে ‘সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ’ ক্লিক করুন।
অতিরিক্ত তথ্য: আপনি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে উত্তর দেবেন যে আপনি বিনিয়োগের জন্য কর ছাড়ের যোগ্য কিনা এবং আপনি একটি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক কিনা।
আইটি ১০বি পূরণ: আপনার মোট সম্পদ যদি ৪০ লাখ বা তার বেশি হয়, তাহলে আপনাকে অবশ্যই স্টেটমেন্ট ফর্মের খরচ বিভাগটি পূরণ করতে হবে। এরপর পরবর্তী ধাপে যেতে ‘সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ’ ক্লিক করুন।
আয়ের বিবরণ: অন্যান্য উৎস, বিদেশী আয়, বা কর-মুক্ত আয় থেকে আয়ের বিবরণ দিন। ‘এনি আদার ইনকাম’ অপশনে ক্লিক করে পূরণ করে পরবর্তী ধাপে যান।
বিনিয়োগ বিভাগ: আপনি যদি বর্তমানে বিনিয়োগ করে থাকেন তাহলে ‘ডিপিএস’ অপশনে ক্লিক করে সকল বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
ব্যয়: বিভিন্ন বিভাগের জন্য ব্যয় বিভাগ থাকবে। আপনি খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান, শিশুদের শিক্ষা, এবং আপনার অন্যান্য ব্যয়ের বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
কর এবং পেমেন্ট: যদি আপনার আয়ের উপর কোনো কর বকেয়া না থাকে, তাহলে আপনি যে পরিমাণ কর দেবেন তা শূন্য হবে। একে ‘শূন্য রিটার্ন’ বলা হয়।
রিটার্ন ভিউ: ‘অনলাইন রিটার্ন’ বিকল্পে ক্লিক করুন এবং আপনি রিটার্ন ফর্ম দেখতে পাবেন। এর নিচের ‘Yes’ অপশনে ক্লিক করলে আয়কর রিটার্ন পাঠানো হবে কমপ্লিট হবে। আপনি যদি কোনো তথ্য সম্পর্কে অনিশ্চিত হন, আপনি ‘No’ অপশনে ক্লিক করতে পারেন এবং সমস্ত তথ্য আবার পরীক্ষা করতে পারেন।
রসিদ ডাউনলোড: আয়কর রিটার্ন সফলভাবে জমা দেওয়া হলে, আপনি আপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি বার্তা দেখতে পাবেন। সেখানে আপনি একটি ‘রেফারেন্স আইডি’ ডাউনলোড করার একটি অপশন পাবেন।
ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১. বেতন খাতে আয় (ফটোকপি সংযুক্ত করুন)
২. সম্পত্তি খাতে আয়
- তলাভিত্তিক ফ্লোর এবং ভাড়া (ভাড়া চুক্তি)
- পৌর করের পরিমাণ (পৌর কর প্রদানের রসিদ)
- বন্ধকী ঋণের সুদ (ব্যাংকের ইস্যুকৃত বিবরণী বা সার্টিফিকেট)
- বাসস্থান খালি থাকাকালীন সময়
৩. কৃষি খাতে আয়
- কৃষি জমির এলাকা
- উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ
- বাজার মূল্য
৪. ব্যবসা বা পেশা খাতে আয়: (ব্যালেন্স শীট এবং আয়-ব্যয়ের বিবরণী, যদি থাকে)
৫. মূলধন লাভ
- মূলধন সম্পদের বিক্রয়মূল্য (বিক্রয় চুক্তি)
- বিক্রিত সম্পদের ক্রয় মূল্য (ক্রয়ের দলিল বা প্রমাণপত্র)
- আনুষঙ্গিক মূলধন ব্যয় (ক্রয়ের প্রমাণপত্র ও আনুষঙ্গিক মূলধন ব্যয়)
৬. আর্থিক সম্পদ খাতে আয়
- ব্যাংকের সুদ বা মুনাফা
- সঞ্চয়পত্রের সুদ
- FDR বা ফিক্সড টার্ম ডিপোজিট
৭. অন্যান্য উৎস থেকে আয়
*অন্যান্য উৎস থেকে আয়ের সমর্থনে প্রমাণপত্র
আয়কর রিটার্ন ফরম
সকল আয়কর অফিসে রিটার্ন ফরম পাওয়া যায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট (nbr.gov.bd) থেকে আয়কর রিটার্ন ফরম ডাউনলোড করা যাবে।
কোনো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন নিবন্ধন ও জমা দিতে কোনো সমস্যায় পড়লে তারা এনবিআর কল সেন্টারের সাহায্য নিতে পারেন।
কল সেন্টারটি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। কল সেন্টারের নম্বরটি হল 09643717171।
ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর রিটার্ন (e Return) সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
আয়কর রিটার্ন (e return) কি?
আয়কর রিটার্ন হল আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছে করদাতার বার্ষিক আয়ের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করার একটি মাধ্যম।
কিভাবে আয়কর রিটার্ন ফরম ডাউনলোড করবেন?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট (nbr.gov.bd) থেকে আয়কর রিটার্ন ফরম ডাউনলোড করা যাবে।
কিভাবে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়?
ই-রিটার্ন নিবন্ধন, ট্যাক্স মূল্যায়ন তথ্য, আয়ের বিবরণ, আইটি ১০বি পূরণ, বিনিয়োগ বিভাগ, কর এবং পেমেন্ট এর মাধ্যমে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়।
কিভাবে শূন্য রিটার্ন পূরণ করতে হয়?
যদি আপনার আয়ের উপর কোনো কর বকেয়া না থাকে, তাহলে আপনি যে পরিমাণ কর দেবেন তা শূন্য হবে। একে ‘শূন্য রিটার্ন’ বলা হয়। আপনাকে আপনার iTax প্রোফাইলে যেতে হবে, রিটার্ন দিতে হবে এবং NIL রিটার্ন বিকল্পটি নির্বাচন করে জমা দিতে হবে।
কত টাকা আয় হলে কর দিতে হবে?
কোনো ব্যক্তির আয় বছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে। তবে নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী একজন করদাতার আয় বছরে ৪ লাখ টাকার বেশি হলে। একজন তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতা যার আয় বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হলে। একজন গেজেটেড যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতা যার আয় বছরে ৫ লাখ টাকার বেশি হলে।
আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে কি হবে?
কোনো ব্যক্তির আয় বছরে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে। তবে নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী একজন করদাতার আয় বছরে ৪ লাখ টাকার বেশি হলে। একজন তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতা যার আয় বছরে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হলে। একজন গেজেটেড যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতা যার আয় বছরে ৫ লাখ টাকার বেশি হলে।
Follow Us
See More:
- Blog (6)
- How To.. (25)
- ই-পাসপোর্ট (1)
- জন্ম নিবন্ধন (4)
- চাকরি (7)
- বেসরকারি চাকরি (1)
- সরকারি চাকরি (7)
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (4)
- পিডিএফ বই (11)
- ১ম – ৮ম শ্রেণি (3)
- ভর্তি সংক্রান্ত (5)
- কলেজ ভর্তি (1)
- বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি (3)
- শিক্ষা (11)
- স্কিল শেয়ার (12)
- ডিজিটাল মার্কেটিং (10)