হাইপোথাইরয়েডিজম ও গর্ভধারণ: সম্ভাব্য সমস্যা ও সমাধান– হাইপোথাইরয়েডিজম গর্ভধারণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং গর্ভাবস্থায় জটিলতা বাড়ায়। তবে সঠিক চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সুস্থ গর্ভধারণ সম্ভব।
কীভাবে হাইপোথাইরয়েডিজম গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করে?
১. অনিয়মিত ঋতুস্রাব (Irregular Periods)
- থাইরয়েড হরমোনের অভাবে ডিম্বস্ফোটন (Ovulation) বাধাগ্রস্ত হয়।
- ফলে প্রজনন ক্ষমতা কমে যায় (Infertility)।
২. গর্ভপাতের ঝুঁকি (Miscarriage Risk)
- অনিয়ন্ত্রিত হাইপোথাইরয়েডিজমে প্রথম ত্রৈমাসিকে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়ে।
৩. গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে সমস্যা
- থাইরয়েড হরমোন ফিটাল ব্রেইন ডেভেলপমেন্টের জন্য অপরিহার্য।
- হাইপোথাইরয়েডিজম থাকলে শিশুর বুদ্ধিমত্তা ও শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
৪. অন্যান্য জটিলতা
- প্রিক্ল্যাম্পসিয়া (উচ্চ রক্তচাপ ও প্রোটিনিউরিয়া)।
- অ্যানিমিয়া ও প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি।
গর্ভধারণের আগে ও সময়ে করণীয়
১. থাইরয়েড টেস্ট (TSH, Free T4)
- গর্ভধারণের আগেই TSH লেভেল চেক করুন।
- আদর্শ TSH মাত্রা:
- সাধারণ মহিলা: ০.৪–৪.০ mIU/L
- গর্ভধারণের সময়: < ২.৫ mIU/L (প্রথম ত্রৈমাসিকে)
২. ওষুধের ডোজ সামঞ্জস্য করা
- লেভোথাইরোক্সিনের ডোজ গর্ভাবস্থায় ২৫–৫০% বাড়াতে হতে পারে।
- গর্ভধারণের পরই ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
৩. নিয়মিত মনিটরিং
- প্রতি ৪–৬ সপ্তাহে TSH টেস্ট করুন।
৪. পুষ্টিকর খাবার
- আয়োডিন: সামুদ্রিক মাছ, আয়োডিনযুক্ত লবণ।
- আয়রন ও ফোলিক অ্যাসিড: পালং শাক, ডাল, ডিম।
- সেলেনিয়াম: বাদাম, ডিম।
গর্ভাবস্থায় হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ
- অতিরিক্ত ক্লান্তি বা ওজন বৃদ্ধি।
- ঠান্ডা লাগা বা কোষ্ঠকাঠিন্য।
- ডিপ্রেশন বা মস্তিষ্কের কাজে ধীরগতি।
সতর্কতা
- স্ব-চিকিৎসা নয়: ওষুধের ডোজ নিজে পরিবর্তন করবেন না।
- ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট (আয়রন/ক্যালসিয়াম) নিন (লেভোথাইরোক্সিনের সাথে অন্তত ৪ ঘণ্টা ব্যবধান রাখুন)।
শেষ কথাঃ
হাইপোথাইরয়েডিজম নিয়ন্ত্রণে রাখলে সুস্থ গর্ভধারণ ও সুস্থ শিশুর জন্ম সম্ভব। গর্ভধারণের পরিকল্পনা থাকলে আগেই থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট করান এবং একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট বা গাইনোকোলজিস্ট-এর সাথে পরামর্শ করুন।