সোরিয়াসিস কেন হয়?- সোরিয়াসিস(Psoriasis) একটি দীর্ঘস্থায়ী অটোইমিউন ত্বকের রোগ, যাতে ত্বকে লাল, শুষ্ক, চুলকানিযুক্ত প্যাচ (প্লাক) দেখা দেয়। এটি সংক্রামক নয় এবং জিনগত ও পরিবেশগত কারণের সমন্বয়ে ।
সোরিয়াসিস হওয়ার (কারণসমূহ):
1. অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া (Autoimmune Dysfunction)
- শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভুলবশত স্বাস্থ্যকর ত্বকের কোষকে ক্ষতিকর ভেবে আক্রমণ করে।
- এতে ত্বকের কোষ অতিরিক্ত দ্রুত (৩–৪ দিনে) জন্মায় (স্বাভাবিক সময় ২৮–৩০ দিন), ফলে স্তূপ হয়ে প্লাক তৈরি হয়।
2. জিনগত কারণ (Genetic Factors)
- ৩০–৫০% ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস থাকে (যেমন: HLA-Cw6 জিনের সম্পর্ক)।
- যদি বাবা-মা উভয়ের সোরিয়াসিস থাকে, সন্তানের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি ৫০%।
3. ট্রিগার ফ্যাক্টর (Trigger Factors)
- মানসিক চাপ: উদ্বেগ, ডিপ্রেশন রোগটিকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
- ত্বকের আঘাত: কাটা, পোড়া, ট্যাটু বা অতিরিক্ত ঘষলে নতুন প্লাক হতে পারে (Koebner phenomenon)।
- সংক্রমণ: গলা ব্যথা (Streptococcal infection), HIV, বা দাঁতের ইনফেকশন।
- ওষুধ: লিথিয়াম, বিটা-ব্লকার, ম্যালেরিয়ার ওষুধ (Hydroxychloroquine)।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল: রোগের তীব্রতা বাড়ায়।
- হরমোনাল পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় ভালো বা খারাপ হতে পারে।
4. অন্যান্য কারণ
- স্থূলতা: শরীরের ভাঁজে (যেমন: কুঁচকি, বগলে) ইনভার্স সোরিয়াসিস বেশি হয়।
- শীত বা শুষ্ক আবহাওয়া: ত্বকের শুষ্কতা বাড়ায়।
সোরিয়াসিসের প্রকারভেদ (Types):
- প্লাক সোরিয়াসিস (৮০% ক্ষেত্রে): লাল প্যাচের উপর সাদা আঁশ।
- গাট্টেট সোরিয়াসিস: ছোট গোল দাগ (স্ট্রেপ থ্রোট পর দেখা দেয়)।
- পাস্টুলার সোরিয়াসিস: পুঁজ-filled ফোস্কা।
- এরিথ্রোডার্মিক সোরিয়াসিস: সমগ্র শরীর লাল হয়ে যায় (জরুরি অবস্থা)।
চিকিৎসা (Treatment):
- টপিকাল ক্রিম: স্টেরয়েড, ভিটামিন-D অ্যানালগ (Calcipotriol)।
- ফটোথেরাপি: UVB/UVA আলো।
- সিস্টেমিক ওষুধ: Methotrexate, Cyclosporine (গুরুতর ক্ষেত্রে)।
- বায়োলজিক থেরাপি: Infliximab, Adalimumab (ইমিউন সিস্টেম টার্গেট করে)।
প্রতিরোধের উপায়:
- ত্বক আর্দ্র রাখুন: ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: যোগব্যায়াম, মেডিটেশন।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
- সূর্যালোকের সংস্পর্শ: পরিমিত রোদ উপকারী (অতিরিক্ত নয়)।
সোরিয়াসিস সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
